Back  

প্রশ্ন/উত্তর/মতামত

প্রশ্ন

বিষয় : কমলালেবু গাছে ফুল না আসার কারণ।
বিস্তারিত :কমলালেবু গাছে ফুল না আসার কারণ কি? গাছের কচি পাতাগুলো কুকরিয়ে যাচ্ছে। উপরের বিষয় গুলোর প্রতিকার কি জানাবেন। ধন্যবাদ।

উত্তর/মতামত

কমলালেবু গাছে ফুল না আসার অনেক কারণ থাকতে পারে। যেমন: জলবায়ু, মাটি, বংশ বিস্তার পদ্ধতি, জাত, সঠিক পরিচর্যা, সার-সেচ ইত্যাদি। নিম্নোক্ত পদ্ধতিগুলো অনুসরন করে দেখতে পারেন। জলবায়ু ও মাটি যথেষ্ট বৃষ্টিপাত হয় এমন আর্দ্র ও উঁচু পাহাড়ী অঞ্চলে কমলা ভাল জন্মে। উঁচু, উর্বর, গভীর সুনিষ্কাশিত এবং মৃদু অম­ভাবাপন্ন বেলে দোআঁশ মাটিতে কমলা ভাল হয়। এটেল মাটির পানি নিষ্কাশন ক্ষমতা কম হওয়ায় কমলা চাষের অনুপযোগী। প্রখর সূর্যকিরণ ও উচ্চ তাপমাত্রায় কমলা গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। কমলা উৎপাদনের জন্য বার্ষিক ১৫০০-২৫০০ মি.মি. বৃষ্টিপাত, ২৫০-৩০০সে. গড় তাপমাত্রা এবং আংশিক ছায়াযুক্ত স্থান উপযোগী। কমলা চাষের জন্য মাটির আদর্শ অম­ক্ষারত্ব মান ৫.৫-৬.০। বংশ বিস্তার বীজ এবং অঙ্গজ দুই ভাবেই কমলার বংশ বিস্তার হয়। অঙ্গজ উপায়ে জোড় কলম (ভিনিয়ার ও ক্লেফট গ্রাফটিং) ও কুঁড়ি সংযোজন (টি-বাডিং) পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। জোড় কলম ঃ গ্রাফটিং এর জন্য প্রথমে রুটস্টক (আদিজোড়) উৎপাদন করতে হবে। রুটস্টক হিসেবে বাতাবিলেবু, রাফলেমন, কাটা জামির, রংপুর লাইম প্রভৃতি ব্যবহার করা হয়। অতঃপর কাঙ্খিত মাতৃগাছ হতে সায়ন (উপজোড়) সংগ্রহ করে রুটস্টকের উপর স্থাপন করে কমলার গ্রাফটিং করা হয়। রুটস্টক হিসেবে ১.০ হতে ১.৫ বছর বয়সের সুস্থ্য, সবল ও সোজাভাবে বৃদ্ধি প্রাপ্ত চারা নির্বাচন করতে হবে। নির্বাচিত মাতৃগাছ হতে সায়ন তৈরির জন্য দুটি চোখসহ ৫-৬ সে.মি. লম্বা ও ৮-৯ মাস বয়সের ডাল সংগ্রহ করতে হবে। ফান্ডুন (ফেব্রুয়ারি-মার্চ) ও জ্যৈষ্ঠ (মে-জুন) মাস কলম করার সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। সাধারণত কলম করার ১০-১৫ দিনের মধ্যে রুট স্টক ও সায়নের মধ্যে সংযোগ স্থাপিত হয় এবং সায়নের চোখ ফুটে কুশি বের হয়। কলম হতে একাধিক ডাল বের হলে সুস্থ্য সবল ও সোজাভাবে বেড়ে উঠা ডালটি রেখে বাকিগুলো কেটে ফেলতে হবে। গাছে সার প্রয়োগঃ গাছের যথাযথ বৃদ্ধির জন্য সময়মত, সঠিক পরিমাণে এবং সঠিক পদ্ধতিতে সার প্রয়োগ করতে হবে। গাছের বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে সারের পরিমাণ বাড়াতে হবে। বয়স ভেদে গাছপ্রতি সারের পরিমাণ নিম্নে দেওয়া হল : গাছের বয়স (বছর) গোবর সার (কেজি) ইউরিয়া (গ্রাম) টিএসপি (গ্রাম) এমওপি (গ্রাম) ১-২ ১০ ২০০ ১০০ ১৫০ ৩-৪ ১৫ ৩০০ ১৫০ ২০০ ৫-১০ ২০ ৫০০ ৪০০ ৩০০ ১০ এর অধিক ৩০ ৬৫০ ৫০০ ৫০০ উপরোল্লিখিত সারের অর্ধেক ফল সংগ্রহের পর অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি মাসে এবং বাকী অর্ধেক ফল মার্বেল আকার ধারণ করার পর অর্থাৎ অক্টোবর মাসে প্রয়োগ করতে হবে। ফলবান গাছের ডালপালা যে পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে তার নীচের জমি কোদাল দিয়ে হালকা করে কুপিয়ে সার প্রয়োগ করতে হবে। সাধারণত গাছের গোড়ার ৩০ সে.মি. এলাকায় কোন সক্রিয় শিকড় থাকে না, তাই সার প্রয়োগের সময় এই পরিমাণ স্থানে সার প্রয়োগ করা উচিত নয়। পাতা মোড়ানো পোকা : আগস্ট থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত এ পোকার আক্রমণ বেশী দেখা যায়। পোকার কীড়াগুলি কঁচি পাতা মুড়িয়ে তার ভিতর অবস্থান করে এবং পাতা খেয়ে ক্ষতি সাধন করে। তাছাড়া এরা কচি ফল ছিদ্র করে ভিতরে প্রবেশ করে এবং এসব ছিদ্র পথে অন্যান্য রোগের জীবাণু প্রবেশ করে ফল নষ্ট করে ফেলে। প্রতিকারঃ কীড়াসহ মোড়ানো পাতা সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। আক্রমণ বেশি হলে ১ গ্রাম একতারা ২৫ ডব্লিওজি অথবা ২ মি.লি. সুমিথিয়ন ৫০ ইসি প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ১০ দিন অন্তর ২-৩ বার গাছে স্প্রে করতে হবে।