Back  
Print This Document

প্রযুক্তির বিবরণ

প্রযুক্তির নাম :কুমড়া জাতীয় ফসলের মাছি পোকার সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনা

বিস্তারিত বিবরণ : 

ফসলের নাম: কুমড়া জাতীয় (করলা, মিষ্টি কুমড়া, শসা, লাউ, চিচিংগা, কাকরল, উচ্ছে, ধুন্দুল, তরমুজ ইত্যাদি)
পোকার নামঃ কুমড়া জাতীয় ফসলের মাছি পোকা
পোকার বৈশিষ্ট ও ক্ষতির ধরনঃ এ জাতীয় মাছি পোকা সাধারণত: কুমড়া জাতীয় ফসলের কচি ফলে বেশী আক্রমণ করে। স্ত্রী মাছি তার লম্বা সরু ডিম পাড়ার নলের সাহয্যে কচি ফলের ভিতরে ডিম পাড়ে। ডিম থেকে কীড়া বের হয়ে ফলের শাঁস খেয়ে বড় হতে থাকে, ফলে আক্রান্ত ফল পঁচে যায় ও খাওয়ার অনুপোযুক্ত হয়ে পড়ে। বেঁচে থাকা আক্রান্ত ফল বিকৃত হয়ে যায় ঠিকমত বাড়তে পারেনা, ফলে বাজার দর একদম কমে যায়। এই পোকার জীবন চক্র ও দমনের ব্যাপারে কৃষকের সঠিক ধারণা না থাকার কারণে শুধুমাত্র কীটনাশক প্রয়োগ করে মাছি পোকা দমনের ব্যর্থ চেষ্টা করে থাকেন। বিষাক্ত কীটনাশকের এরূপ অপব্যবহার এক দিকে কৃষক এবং ভোক্তার স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি স্বরূপ, পরিবেশ দূষণকারী এবং অন্যদিকে এর ফলে এ ফসলসমূহের বাজার দরও বেড়ে যায়। এ ছাড়া অধিক হারে কীটনাশক প্রয়োগের ফলে এ পোকা কীটনাশক প্রতিরোধী হয়ে পড়ছে, ফলশ্রুতিতে তা দমন করা প্রায় অসাধ্য হয়ে পড়েছে। এদের আক্রমনের ফলে প্রায় ৫০ -৭০ ভাগ ফল নস্ট হয়ে যায়
দমন ব্যবস্থাপনা:

১) পরিস্কার পরিচ্ছন্ন চাষাবাদ:
মাছি পোকার কীড়া আক্রান্ত ফল দ্রুত পঁচে যায় এবং গাছ হতে মাটিতে ঝরে পড়ে। পোকা আক্রান্ত ফল কোন ক্রমেই জমি বা জমির আশেপাশে ফেলে রাখা উচিত নয়। কারণ উক্ত ফলে লুকিয়ে থাকা পরিপূর্ণ কীড়া অল্প সময়ের মধ্যেই পুত্তলি ও পরবর্তীতে পূর্ণাঙ্গ পোকায় পরিণত হয়ে নতুনভাবে আক্রমণ শুরু করতে পারে। সুতরাং পোকা আক্রান্ত ফলসমূহ সংগ্রহ করে ধ্বংস করে ফেললে মাছি পোকার বংশবৃদ্ধি অনেকটা কমিয়ে আনা সম্ভব। যেহেতু এ পোকার কীড়া সমূহ মাটির ২-৩ সেমি গভীরে পুত্তলিতে পরিণত হয়, সেহেতু আক্রান্ত ফল কমপক্ষে ২০ সেমি পরিমাণ গর্ত করে মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে।
২) সেক্স ফেরোমন ও বিষটোপ ফাঁদের যৌথ ব্যবহার: পুরুষ পোকাকে আকৃষ্ট করার জন্য স্ত্রী পোকা এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ নির্গত করে যা সেক্স ফেরোমন নামে পরিচিত। সেক্স ফেরোমনের গন্ধে পুরুষ পোকা আকৃষ্ট হয়ে স্ত্রী পোকার সাথে মিলিত হয়। ফলের স্ত্রী মাছি পোকা কর্তৃক নিঃসৃত এমনই একটি সেক্স ফেরোমন বর্তমানে আবিস্কৃত হয়েছে যা কৃত্রিম উপায়ে তৈরী করা সম্ভব। ফেরোমনটির নাম কিউলিউর। কিউলিউর নামক সেক্স ফেরোমন ব্যবহার করে পুরুষ মাছি পোকা আকৃষ্ট করা সম্ভব। অন্যদিকে সম্প্রতি বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কীটতত্ত্ব বিভাগের বিজ্ঞানীগণ দেশে সহজলভ্য দ্রবাদি দিয়ে অত্যন্ত সস্তা ও পোকা ধরার কাজে অত্যন্ত কার্যকরী এক ধরনের সেক্স ফেরোমন ফাঁদ তৈরী করেছেন যা পানি ফাঁদ নামে পরিচিত। উক্ত ফাঁদ যে কেউ অতি সহজেই ঘরে বসে তৈরী করতে সকম। ফাঁদ পাতা অবস্থায় সবসময় পাত্রের তলা থেকে ৩-৪ সেমি উচ্চতা পর্যন্ত সাবান মিশ্রিত পানি রাখতে হবে। পানি ফাঁদের মাধ্যমে উক্ত ফেরোমন ব্যবহার করে আকৃষ্ট পুরুষ মাছিসমূহ মেরে ফেলা যায়। ফাঁদ প্রতি ১ মিলি বা ১৫-২০ ফোটা ফেরোমন এক খন্ড তুলার টুকরায় ভিজিয়ে পানি ফাঁদের প্লাস্টিক পাত্রের মুখ হতে ৩-৪ সেমি নীচে একটি সুরু তার দিয়ে স্থাপন করতে হবে। ফেরোমন গন্ধে আকৃষ্ট হয়ে পুরুষ মাছি পোকা প্লাস্টিক পাত্রের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে ও সাবান পানিতে আটকা পড়ে ও মারা যায়। একবার ব্যবহারের পর ফেরোমনটিকে আর পরিবর্তনের প্রয়োজন হয় না। খেয়াল রাখতে হবে পাত্রের তলায় রক্ষিত সাবান পানি যেন শুকিয়ে না যায়। যত্নের সাথে ব্যবহার করলে এধরনের প্লাস্টিক পাত্রের ফাঁদ ৩-৪ মৌসুম পর্যন্ত অনায়াসেই ব্যবহার করা যায়।
বিষটোপ ফাঁদে পূর্ণাঙ্গ স্ত্রী ও পুরুষ মাছি পোকা আকৃষ্ট হয় এবং মারা যায়। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কীটতত্ত্ব বিভাগের বিজ্ঞানীগণ এই বিষটোপ ফাঁদ তৈরী করছেন। বিষ টোপ ফাঁদ এর ব্যবহার পদ্ধতি হলো ১০০ গ্রাম পাকা মিষ্টি কুমড়া কুচি কুচি করে কেটে তা থেতলিয়ে ০.২৫ গ্রাম মিপসিন ৭৫ পাউডার অথবা সেভিন ৮৫ পাউডার বা সানটান ৫০ বা সেকুফেন ৮০ পাউডার এবং ১০০ মিলি পানি মিশিয়ে ছোট একটি মাটির পাত্রে রেখে তিনটি খুটির সাহয্যে এমনভাবে স্থাপন করতে হবে যাতে বিষটোপের পাত্রটি মাটি থেকে ০.৫ মি উচুতে থাকে। বিষটোপের পাত্রটি ৩টি খুটির মাথায় অন্য একটি বড় আকারের চেপ্টা মাটির পাত্র দিয়ে ঢেকে দিতে হবে যাতে বৃষ্টির পানি বা রোদে নষ্ট না হয়। বিষটোপ তৈরীর পর ৩-৪ দিন পর্যন্ত ব্যবহার করে তা ফেলে দিয়ে আবার নতুন করে তৈরী বিষটোপ ব্যবহার করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যেন বিষটোপ কখনও শুকিয়ে না যায়।
সেক্স ফেরোমন ও বিষটোপ ফাঁদ কুমড়া জাতীয় ফসলের জমিতে ক্রমানুসারে ১২ মি দূরে দূরে স্থাপন করতে হবে। সেক্স ফেরোমন ও বিষটোপ ফাঁদ যৌথভাবে ব্যবহার করে অত্যমত্ম কার্যকরীভাবে মাছি পোকা দমন করা সম্ভব। কুমড়া জাতীয় ফসলে এ পদ্ধিতির চমকপ্রদ কার্যকারিতার জন্য কৃষকের মাঝে এটি যাদুর ফাঁদ নামে পরিচিত লাভ করেছে। সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এই যে, সর্বোচ্চ ফল লাভের জন্য সকল কুমড়া জাতীয় সবিজ চাষীকে একত্রে উক্ত পদ্ধতি সমূহে প্রয়োগ করতে হবে।

মাছি পোকা আক্রান্ত করলা (ছবি-১)

মাছি পোকা আক্রান্ত করলা (ছবি-২)

করলার মাঠে স্থাপিত ফেরোমন ফাঁদ


প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞের সাথে কথা বলুন।
 
Back