Back  
Print This Document

প্রযুক্তির বিবরণ

প্রযুক্তির নাম :ফলজ ও বনজ বৃক্ষের জায়ান্ট মিলিবাগ দমন ব্যবস্থাপনা

বিস্তারিত বিবরণ : 

ফসলের নামঃ ফল যেমন কাঁঠাল, আম, লেবু, নারিকেল ও বনজ বৃক্ষ
পোকার নামঃ জায়ান্ট মিলিবাগ
পোকার বৈশিষ্ট্য ও ক্ষতির ধরণ: সম্প্রতি বাংলাদেশে জায়ান্ট মিলিবাগ বিভিন্ন ফলজ ও বনজবৃক্ষে মারাত্বক ক্ষতিকারক পোকা হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে। এই পোকা বিভিন্ন ফলজ উদ্ভিদ যেমন- কাঁঠাল, আম, লেবু, নারিকেল এবং বনজ বৃক্ষে যেমন- রেইন ট্রি, কড়ই গাছে আক্রমণ করে। স্ত্রী নিম্ফ পোকা পুষ্পমঞ্জুরী, কচি পাতা, শাখা প্রশাখা ও ফলের বোঁটা থেকে রস শোষন করে ফলে গাছের আক্রান্ত অংশ শুকিয়ে যায় যা ফল ধরার ক্ষত্রে বিরূপ প্রভাব ফেলে এবং অনেক ফল ঝরে যায়। বিগত ২০১৪ সনে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট ও গার্হস্থ অর্থনীতি কলেজের বৃক্ষে সমূহে এই পোকার ব্যপক আক্রমন পরিলক্ষিত হয় যা বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়াতে আলোড়ন সৃষ্টি করে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চলসহ বিভিন্ন অংশে এ পোকার ব্যপক প্রার্দুভাব দেখা যাচ্ছে।
দমন ব্যবস্থাপনা : বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের কীটতত্ত্ব বিভাগের বিজ্ঞানীগণ এ পোকা দমনে একটি সহজ প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে পোকা ব্যপকভাবে ছড়িয়ে যাবার পূর্বেই অতি সহজেই একত্রে মেরে ফেলা যায় অন্যদিকে এটি অত্যন্ত কার্যকরি, সহজ ও অর্থনৈতিকভাবে সাশ্রয়ী। সাধারণত: আক্রমনের সময়ানুযায়ী ২টি পদ্ধতিতে এ পোকা দমন করা যায়, ১) মার্চ- এপ্রিল মাসে পূর্ণাঙ্গ স্ত্রী পোকা ধ্বংস করা এবং ২) নভেম্বর মাসে সদ্য প্রস্ফুটিত নিম্ফ ধ্বংস করা।
দমন পদ্ধতি ১। মার্চ- এপ্রিল মাসে পূর্ণাঙ্গ স্ত্রী পোকা ধ্বংস করা: এপ্রিল-মে মাসে পূর্ণাঙ্গ স্ত্রী পোকাগুলি মাটিতে ডিম পাড়ার জন্য দলবদ্ধভাবে গাছ থেকে মাটিতে নেমে আসে তখন এরা বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে ফেব্রুয়ারী মাসের শেষ সপ্তাহ হতেই গাছের গোড়ায় মাটি থেকে ১ মিটার উচুঁতে ৩-৪ ইঞ্চি চওড়া প্লাষ্টিকের পিচ্ছিল ব্যান্ড (রেপিং টেপ) গাছের চতুর্দিকে আবৃত করে দিলে এরা উপর থেকে নেমে আসতে বাধাপ্রাপ্ত হয়। অনেক সময় প্লাষ্টিকের পিচ্ছিল ব্যান্ড এর উপরের অংশে স্ত্রীপোকা সমূহ জমা হয়। এ অবস্থায় এদের সহজেই পিটিয়ে বা একসাথে করে আগুনে পুড়িয়ে মারা সম্ভব অথবা জমাকৃত পোকার উপর সংস্পর্শ কীটনাশক স্প্রে করে দমন করা যায়। যেহেতু এ পোকাটির বহিরাবরন ওয়াক্সি পাউডার জাতীয় পদার্থ দিয়ে সুরক্ষিত থাকে সেহেতু পরীক্ষিত কীটনাশক ছাড়া এটি দমন করা দুরহ। এ ক্ষেত্রে প্রথমে ক্লোরপাইরিফস (ডারসবান ২০ ইসি বা এ জাতীয় কীটনাশক প্রতি লিটার পানিতে ৩ মি:লি: হারে) এবং তার ২-৩ দিন পর কার্বারাইল জাতীয় কীটনাশক (সেভিন ৮৫ এসপি বা মিপসিন ৭৫ ডব্লিউপি প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে) আক্রান্ত অংশে স্প্রে করতে হবে। প্রতি ১৫ দিন অন্তর ২-৩ বার এভাবে স্প্রে করলে এ পোকা সম্পূর্ণভাবে দমন করা সম্ভব।
দমন পদ্ধতি ২। নভেম্বর মাসে সদ্য প্রস্ফুটিত নিম্ফ ধ্বংস করা: নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ হতেই নিম্ফসমূহ গাছ বেয়ে উপরে উঠে তাই উক্ত সময় গাছের গোড়ায় মাটি থেকে ১ মিটার উচুঁতে ৩-৪ ইঞ্চি চওড়া প্লাষ্টিকের পিচ্ছিল ব্যান্ড (রেপিং টেপ) গাছের চতুর্দিকে আবৃত করে দিলে এরা বার বার উঠার ব্যর্থ চেষ্টা করে পরিশ্রান্ত হয়ে মারা যায়। অনেক সময় প্লাষ্টিকের পিচ্ছিল টেপ এর নিচের অংশে নিম্ফ সমূহ জমা হয়। এ অবস্থায় এদের সহজেই পিটিয়ে বা একসাথে করে আগুনে পুড়িয়ে মারা সম্ভব অথবা জমাকৃত পোকার উপর সংস্পর্শ কীটনাশক স্প্রে করে দমন করা যায়। ব্যান্ডের নীচে একত্রিত নিম্ফসমূহকে মেরে ফেলার জন্য কার্বারিল (সেভিন) ৮৫ এসপি প্রতি লিটার পানিতে ৩ গ্রাম হারে মিশিয়ে ১০ দিন অন্তর ২-৩ বার ভালভাবে স্প্রে করতে হবে। এসময় নিম্ফসমূহকে গাছে উঠা হতে নিবৃত করতে পারলে এ পোকার আক্রমন পুরোপুরিভাবে দমন করা সম্ভব।

গাছের কান্ডে বাইন্ডিং টেপ

বাইন্ডিং টেপের নীচে জায়েন্ট মিলিবাগের নিস্ফ

বাইন্ডিং টেপের নীচে স্প্রে করে মিলিবাগ দমন


প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞের সাথে কথা বলুন।
 
Back