Back  

প্রশ্ন/উত্তর/মতামত

প্রশ্ন

বিষয় : নারিকেল গাছে সমস্যা
বিস্তারিত :নারিকেল গাছের বয়স ২০ বছর। কিন্তু নারিকেল আসে না। দু একটা আসলেও ছোট থাকতেই ফেটে যায়।

উত্তর/মতামত

উৎপাদন কলাকৌশল জমি নির্বাচন ও তৈরিঃ নারিকেল চাষের জন্য বর্ষার পানি জমে থাকে না এমন জমি নির্বাচন করতে হবে। এর শিকড় মাটির খুব বেশী গভীরে প্রবেশ করে না তাই জমিতে পানির তল খুব বেশী নীচে থাকা ক্ষতিকর। বাগান আকারে নারিকেল আবাদের জন্য সমস্ত আগাছা, মোথা ও গাছের গুটি উপড়ে ফেলতে হবে। উত্তম রূপে চাষ ও মই দিয়ে জমি তৈরি করতে হবে। রোপণ পদ্ধতি ও রোপণের সময়ঃ নারিকেল বাগানের ক্ষেত্রে সাধারণত বর্গাকার পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। মধ্য জ্যৈষ্ঠ থেকে মধ্য আশ্বিন (জুন থেকে সেপ্টেম্বর) মাস নারিকেল চারা রোপণের উপযুুক্ত সময়। মাদা তৈরিঃ চারা রোপণের ১৫-২০ দিন পূর্বে ৬দ্ধ ৬ মিটার দূরত্বে ১ মি. দ্ধ ১ মি.দ্ধ ১ মি. গর্ত তৈরি করে প্রতি গর্তে ২০-৩০ কেজি গোবর সার, ২৫০ গ্রাম টিএসপি, ৪০০ গ্রাম এমওপি, ১০০ গ্রাম জিংক সালফেট ও ৫০ গ্রাম বরিক এসিড প্রয়োগ করে গর্তের মাটির সাথে ভালভাবে মিশিয়ে গর্ত ভরাট করে সেচ দিতে হবে। চারা/কলম রোপণ ও পরিচর্যাঃ গর্তের মাঝখানে নারিকেল চারা এমনভাবে রোপণ করতে হবে যাতে নারিকেলের খোসা সংলগ্ন চারার গোড়ার অংশ মাটির উপরে থাকে। চারা রোপণের সময় মাটি নীচের দিকে ভালভাবে চাপ দিতে হয় যাতে চারাটি শক্তভাবে দাড়িয়ে থাকতে পারে। রোপণের পর চারায় খুঁটি ও বেড়ার ব্যবস্থা করতে হবে এবং পানি দিতে হবে। গাছে সার প্রয়োগঃ নারিকেল গাছে প্রচুর সারের প্রয়োজন হয়। গাছের বয়স বাড়ার সাথে সাথে সারের পরিমাণও বাড়াতে হয়। অন্যান্য সারের তুলনায় নারিকেল গাছে পটাশ জাতীয় সারের মাত্রা বেশী লাগে। এ সারের অভাবে ফল দেরীতে আসে, ফুল ঝরে যায় ও রোগের প্রকোপ বাড়ে। প্রতি বছর নিম্নলিখিত হারে সার প্রয়োগ করতে হবে। সারের নাম গাছের বয়স (বছর) ১-৪ ৫-৭ ৮-১০ ১১-১৫ ১৬-২০ ২০ এর উর্দ্ধে গোবর (কেজি) ১০ ১৫ ২০ ২৫ ৩০ ৪০ ইউরিয়া (গ্রাম) ২০০ ৪০০ ৮০০ ১০০০ ১২০০ ১৫০০ টিএসপি (গ্রাম) ১০০ ২০০ ৪০০ ৫০০ ৬০০ ৭৫০ এমওপি(গ্রাম) ৪০০ ৮০০ ১৫০০ ২০০০ ২৫০০ ৩০০০ জিপসাম (গ্রাম) ১০০ ২০০ ২৫০ ৩৫০ ৪০০ ৫০০ জিংক সালফেট(গ্রাম) ৪০ ৬০ ৮০ ১০০ ১৫০ ২০০ বরিক এসিড (গ্রাম) ১০ ১৫ ২০ ৩০ ৪০ ৫০ দুই কিস্তিতে সার প্রয়োগ করতে হবে। প্রথম কিস্তিতে অর্ধেক সার মধ্য বৈশাখ থেকে মধ্য জ্যৈষ্ঠ (মে) মাসে এবং দ্বিতীয় কিস্তিতে বাকী অর্ধেক সার মধ্য ভাদ্র থেকে মধ্য আশ্বিন (সেপ্টেম্বর) মাসে গাছের গোড়া থেকে চতুরদিকে ১.০ মিটার জায়গা বাদ দিয়ে ১.০-২.৫ মিটার দূর পর্যন্ত মাটিতে ২০ -৩০ সে.মি. গভীরে প্রয়োগ করতে হবে। সার দেয়ার পর মাটি কুপিয়ে দিতে হবে। এ সময় মাটিতে রস কম থাকলে অবশ্যই সেচ দেয়া প্রয়োজন। বেশী বৃষ্টিপাত বা বেশী শুষ্কতার সময় সার প্রয়োগ ঠিক হবে না। আগাছা দমনঃ নারিকেল বাগান সব সময় আগাছামুক্ত রাখতে হবে। বর্ষার শুরুতে এবং শেষে জমিতে চাষ দিয়ে, কোদাল দ্বারা কুপিয়ে অথবা আগাছা নাশক ঔষধের সাহায্যে আগাছা দমন করা যায়। পানি সেচ ও নিস্কাশনঃ নারিকেল ফসলের উপর সেচ ও নিস্কাশনের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পরীক্ষালদ্ধ ফলাফল থেকে দেখা গেছে যে সঠিকভাবে সেচ দিলে ফলন ৭৫% পর্যন্ত বেড়ে যায়। শুষ্ক মৌসুমে ১০-১৫ দিন পর পর এবং গাছে সার প্রয়োগের পর পানি সেচ দিতে হবে। বেসিন এবং প্লাবন এ দুই পদ্ধতির সাহায্যে সেচ প্রদান করা যায়। তবে প্লাবন পদ্ধতিতে ফলন ভাল হয়। বর্ষা মৌসুমে গাছের গোড়ায় যেন পানি দাড়াতে না পারে তার জন্য পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা করা দরকার।